ভাঙ্গা ও গড়া
সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (র:)
বই পরিচিতি:
ভারত বিভাগের পূবাহ্নে পূর্ব পাঞ্জাবে যে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয় তার তিন মাস পূর্বে ১৯৪৭ সালের ১০ ই মে পাঠানকোটের দারুল ইসলামে অনুষ্ঠিত সাধারন সভায় মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (র:) এর প্রদত্ত ভাষণ।
এই বক্তৃতার প্রাদিপাদ্য হিসাবে তিনি স্রষ্টার এই সুন্দর পৃথিবীকে ধ্বংসাত্বক কাজের মাধ্যমে না ভাঙ্গিয়া, গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে গড়িতে দেশবাসীকে উদ্ধুদ্ধ করেন এবং যাদের গঠনমূলক কাজের যোগ্যতা বেশি প্রাকৃতিকনিয়মের গতিধারায় তাদের হাতেই যে কর্তৃত্ব আসিবে, আল্লাহই সেই শ্বাশত বিধান স্মরন করাইয়া দেন।
ভারত বিভাগের পূবাহ্নে পূর্ব পাঞ্জাবে যে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয় তার তিন মাস পূর্বে ১৯৪৭ সালের ১০ ই মে পাঠানকোটের দারুল ইসলামে অনুষ্ঠিত সাধারন সভায় মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (র:) এর প্রদত্ত ভাষণ।
এই বক্তৃতার প্রাদিপাদ্য হিসাবে তিনি স্রষ্টার এই সুন্দর পৃথিবীকে ধ্বংসাত্বক কাজের মাধ্যমে না ভাঙ্গিয়া, গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে গড়িতে দেশবাসীকে উদ্ধুদ্ধ করেন এবং যাদের গঠনমূলক কাজের যোগ্যতা বেশি প্রাকৃতিকনিয়মের গতিধারায় তাদের হাতেই যে কর্তৃত্ব আসিবে, আল্লাহই সেই শ্বাশত বিধান স্মরন করাইয়া দেন।
ভাঙ্গা ও গড়া বইয়ের বিষয়বস্তু:
মানুষের ভাল মন্দের জন্য আল্লাহ যে নিয়ম-নীতি নির্ধারন করেছেন তা কারোর চেষ্টায় পরিবর্তিত ও বাতিল হতে পারে না। তার ভেতর কারো সঙ্গে শত্রুতা এবং কারো সঙ্গে স্বজনপ্রীতি নেই। আল্লাহ এ আইনের সর্বপ্রথম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধারা হচ্ছে এই যে, তিনি গড়া পছন্দ করেন এবং ভাঙ্গা পছন্দ করেন না। সবকিছুরই মালিক হিসাবে তিনি তার দুনিয়াকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে চান।
* যে সমস্ত লোক দুনিয়া পরিচালনার ক্ষমতা লাভ করতে চায় তাদের ভেতর থেকে কেবলমাত্র তারাই আল্লাহর দৃষ্টিতে যোগ্যতা সম্পূর্ণ হয়। যারা এ দুনিয়াকে গড়বার যোগ্যতা অন্য সবার চেয়ে বেশি রাখে এরুপ যোগ্যতাসসম্পূণ লোকদেরকেই তিনি দুনিয়া পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করে থাকেন।
* অতএব এসব ক্ষমতাসীন লোকেরা কতটুকু ভাঙ্গে এবং কতটুকু গড়ে সেদিকে তিনি তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখেন। যতক্ষন পর্যন্ত তারা ভাঙ্গার চেয়ে গড়তে থাকে বেশি এবং তাদের চেয়ে বেশি গড়ে ও কম ভাঙ্গে এমন কেউ কর্মক্ষেত্রে থাকে না, ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ তাদের সমস্ত দোষ-ক্রটি সত্তেও দুনিয়া পরিচালনার ক্ষমতা তাদের হাতেই রাখেন। কিন্তু যখন তারা গড়ে কম এবং ভাঙ্গে বেশি তখন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমতাচু্যত করে অন্য লোকদেরকে ঐ একই শর্তে ক্ষমতা দিয়ে থাকেন।
* এ ব্যাপারে সব সময়ই মালিকের যে দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত, আল্লাহও তাই করে থাকেন। তিনি তার দুনিয়া পরিচালনা করার ক্ষেত্রে দাবীদার ও প্রার্থীদের উত্তরাধিকার অথবা জম্মগত অধিকার দেখেন না। তিনি দেখেন কার গড়ার যোগ্যতা বেশি এবং ভাঙ্গবার দিকে ঝোকপ্রবনতা কম রয়েছে। একই সময়ের প্রার্থীদের মধ্যেযারা এ দিক দিয়ে যোগ্যতার বলে প্রমাণিত হয় তাদেরকেই দেশ পরিচালনার জন্য নির্বাচন করা হয়। যতদিন এদের ধ্বংসাত্বক কাজের চেয়ে গঠনমূলক কাজ বেশি হতে থাকে অথবা এদের তুলনায় বেশি ভাল করে গঠনমূলক কাজ করে এবং ধ্বংসাত্বক কাজও কম করে এমন কেউ এগিয়ে না আসে ততদিন দেশ পরিচালনার ক্ষমতা এদের হাতেই রাখা হয়।
মানব জীবনে যে সব কারনে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় সেগুলোকে আমরা চার ভাগে ভাগ করতে পারি:
১. আল্লাহকে ভয় না করা।
২. আল্লাহর বিধান মেনে না চলা।
৩. স্বার্থপরতা।
৪. জড়তা ও বিপথগামিতা।
অপরদিকে মানুষের জীবন যেসব উপায়ে সুন্দররুপে গড়ে ওঠে তাকেও চার ভাগে ভাগ করা যায়:
১. আল্লাহ ভীতি
২. আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করা।
৩. মানবতার ব্যবস্থা
৪. সৎ কাজ
* এই চারটি বিষয়ের সন্তুষ্টির নাম হচ্ছে গড়া ও সংশোধন। আমাদের ভেতরকার সৎ লোকদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনের মধ্যে রয়েছে আমাদের সকলের কল্যান। এ সংগঠন সমস্ত প্রকার ধ্বংসাত্বক কাজ ও ভাঙ্গনের পথ বন্ধ করবে এবং উল্লেখিত উপায়ে গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে অবিরাম গড়ার প্রচেষ্টা চালাবে। এ প্রচেষ্টা এ দেশবাসীকে সঠিক পথে আনতে সফল হলেও আল্লাহ দেশের শাসন ক্ষমতা অযথা দেশের অধিবাসীদের কাছে থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অন্যকে দিয়ে দিবেন এমন অবিচারক তিনি নন। কিন্তু যদি এতে সফলকাম না হওয়া যায় তাহলে আমাদের, আপনাদের ও সমস্ত দেশবাসীর পরিনাম কি হবে তা বলা যায় না।
0 Comments: